1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

গরমের রোগব্যাধি থেকে যেভাবে নিরাপদ থাকতে পারেন

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২
  • ৪৭৩ বার পঠিত

ডেস্ক রিপোর্ট :: বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল উষ্ণতম মাস বলা হলেও আসলে চৈত্র মাসের শুরু থেকেই গরম পড়তে শুরু করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

তবে গরমের সঙ্গে সঙ্গে এই সময় নানা ধরণের রোগব্যাধিও বাড়তে দেখা যায়। কোন কোন রোগ গরমের শুরুতে দেখা যায়। আবার কোন কোনটি তীব্র গরমের সময় প্রকট হয়ে ওঠে। যেমন এরইমধ্যে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, গরমের সময় বিশেষ কয়েকটি রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে দেখা যায়। কিন্তু কিছুটা সতর্ক হলেই এসব রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।

যেসব রোগ থেকে সতর্ক থাকতে হবে

ডায়রিয়া

ডায়রিয়া সারাবছরের একটি রোগ হলেও প্রতিবছর গরমের শুরু থেকেই ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

বাংলাদেশে এর মধ্যেই স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়তে শুরু করেছে ডায়রিয়া রোগী।

রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে ডা. মোঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বাড়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

কলেরা হাসপাতাল হিসাবে অনেকের কাছে পরিচিত আইসিডিডিআর’বিতে গত এক সপ্তাহেই ৮ হাজার ১৫২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। অর্থাৎ শুধু ঢাকাতেই এই হাসপাতালে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন।

ডায়রিয়া বা উদরাময় মূলত পেটের একটি অসুখ। সাধারণত দুষিত পানি বা পচা খাবার থেকে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। ডায়রিয়া হলে খুব দ্রুত শরীর থেকে পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট বের হয়ে গিয়ে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি দেখা দেয়।

ডায়রিয়ায় বিশেষ করে শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে শিশু মৃত্যুর জন্য এটি দ্বিতীয় কারণ।

২৫০ বেড টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার বিবিসি বাংলাকে বলছেন, গরমের সময় পানি দুষিত বেশি হয়। সেটা পান করলে লুজ মোশন, ডায়রিয়া বা কলেরা বেশি হয়। সারা বাংলাদেশেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি থাকে।

ডায়রিয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

নাজমুল ইসলাম খাওয়া, হাত ধোয়া এবং রান্না থেকে শুরু করে প্রতিদিনের কাজকর্মে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বাইরের খাবার, দুষিত বা পচা খাবার এড়িয়ে চলার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।

আয়শা আক্তার বলছেন, ডায়রিয়া হলে রোগীকে নিয়মিত খাবার স্যালাইন দিতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আইভি ফ্লুয়িড স্যালাইন বা ওষুধ দিতে হবে। রোগী দুর্বল হয়ে পড়লে অবশ্যই নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

মেডিসিন রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৌফিক আহমেদ বলছেন, ডায়রিয়ায় শরীর থেকে যে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়, স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে তা পূরণ করা হয়। এখন রাইস স্যালাইনও খেতে দেয়া হয়।

”কিন্তু রোগী যদি বমি হতে শুরু করে, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায় বা জিহ্বা শুষ্ক হয়ে পড়ে, তাহলে কোনরকম বিলম্ব না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কারণ তখন শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে পড়তে শুরু করেছে,” তিনি বলছেন।

পেটের পীড়া

ডায়রিয়া ছাড়াও গরমের সময় অনেকে পেটের নানারকম জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। পেটে ব্যথা, হেপাটাইটিসে ভোগেন।

তৌফিক আহমেদ বলছেন, ”গরমের সময় বাইরের খাবারেও জীবাণুর সংক্রমণ বেশি হয়। ফলে হজমে সমস্যা হয়, খাদ্যে বিষক্রিয়া বেশি হয়। আবার গরমের সময় খাবারদাবার খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এসব পচা খাবার খেলে ডায়রিয়া হতে পারে,” তিনি বলছেন।

বিশেষ করে খোলা খাবার, বাইরের শরবত, খোলা ফল, আখের শরবত ইত্যাদি খেয়ে বেশিরভাগ মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হন।

আবার গরমের মধ্যে মাছির সংক্রমণ অনেক বেড়ে যায়। এসব মাছির মাধ্যমেও খাবার দুষিত হয়ে পড়ে। সেসব খাবার খেয়ে মানুষজন পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হন।

”আমরা দেখেছি, গরমের সময় জন্ডিস বা হেপাটাইটিসের মতো রোগগুলো বেড়ে যায়। দুষিত পানি পান করেই এসব রোগে মানুষ আক্রান্ত হন,’ বলছেন ডা. আহমেদ।

এ থেকে রক্ষায় বাইরের খোলা খাবার না খাওয়া, খাওয়ার পূর্বে খাবারটি ভালো আছে কিনা, তা যাচাই করে নেয়ার পরামর্শ দেন। আর বাইরের শরবত, খোলা ফল খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন এই চিকিৎসক।

ঠাণ্ডা-গরম, কাশি ও জ্বর

আয়েশা আক্তার বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকেই জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। মূলত হঠাৎ ঠাণ্ডা থেকে গরমে পরিবর্তনের কারণে এটা ঘটে।

”হঠাৎ গরম পড়তে শুরু করে। বাইরে গরম আবহাওয়া, কিন্তু অনেকের বাসা বা অফিস, গাড়িতে এসি থাকে। ফলে ঠাণ্ডা থেকে হঠাৎ গরমে যাওয়া বা গরম থেকে ঠাণ্ডার মধ্যে গেলে শরীর মানিয়ে নিতে পারে না। তাই অনেকের সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হন, নাক দিয়ে পানি পড়তে থাকে, কারও কারও জ্বর আসে।”

তবে এ ধরণের সমস্যা সাধারণত কয়েকদিন পরেই ঠিক হয়ে যায় বলে তিনি জানান। যাদের এর আগেও এরকম সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে, তাদের ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় বিশেষভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. আয়েশা আক্তার।

অনেক সময় রোদ থেকে এসে বা জগিং, পরিশ্রমের পর গোসল করতে চলে যান। সেটাও অসুস্থতার কারণ হতে পারে।

আয়েশা আক্তার বলছেন, ”গরম থেকে আসার পর শরীরকে ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। গরম থেকে বা রোদ থেকে এসেই গোছল করতে গেলে ঠাণ্ডা-গরম লাগা বা জ্বর এসে যেতে পারে। এ কারণে শরীরকে ঠাণ্ডার সঙ্গে খানিকটা মানিয়ে নিয়ে গোছল করতে হবে। এভাবে তীব্র গরম থেকে এসেই এসির মধ্যে ঢুকে পড়া ঠিক নয়। সেই সঙ্গে তীব্র তাপ থেকে এসে ঠাণ্ডা পানি বা ফ্রিজের ঠাণ্ডা খাবার খাওয়া যাবে না।”

হিট স্ট্রোক

তীব্র গরমের সময় দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে অসুস্থ পড়ে পড়লে হিট স্ট্রোক বলা হয়ে থাকে। অনেক সময় এতে রোগীর মৃত্যু হয়।

মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কিন্তু কোন কারণে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রির বেশি হয়ে গেলে শরীরের রক্তচাপ কমে যায়, মানুষ তখন অচেতন হয়ে পড়তে পারেন। মস্তিষ্কের যে অংশটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, তীব্র তাপমাত্রার কারণে সেটি শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে হিট স্ট্রোক বলা হয়।

তীব্র গরমে অনেকক্ষণ থাকলে বা পরিশ্রম করলে সাধারণত গরমে শরীরে পানিশূন্যতার তৈরি হয়। তাতেও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

গত বছরের মে মাসে তীব্র গরমে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিঘাটে হিট স্ট্রোকে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

আয়েশা আক্তার বলছেন, তীব্র গরমের সময় শরীর ঘাম বের করে দিয়ে শরীর ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করে। কিন্তু তীব্র গরমে শরীর এক শুষ্ক হয়ে যায় যে, তার ঘামও বের করতে পারে না। তখন শরীরের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যায়। তখন শরীর হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়।

হিট স্ট্রোকের আগে শরীরের অনেক তাপমাত্রা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, ঝিমুনি, বমি বমি ভাব হতে পারে। এছাড়া চামড়ার রং লালচে হয়ে যাওয়া, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, খিঁচুনি, হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে যেতে পারে।

এ থেকে রক্ষার উপায় হিসাবে তিনি বলছেন, তীব্র গরমের সময় রোদের মধ্যে বা তাপের মধ্য কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু কোন কারণে মাঠে বা বাইরে রোদের মধ্যে কাজ করতে হলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করা উচিত। সেই সঙ্গে গরমের সময় প্রচুর পানি পান করতে হবে। ডায়াবেটিস বা প্রেশার না থাকলে বারবার ওরস্যালাইন খাওয়া উচিত।

সেই সঙ্গে গরমের সময় সাদা কাপড় ও সুতির নরম কাপড় ব্যবহার করা উচিত। এ জাতীয় কাপড় শরীর ঠাণ্ডা রাখে। মাঠের বা বাইরে কাজ করতে হলে সেটা তীব্র রোদের মধ্যে না করে আগে বা পরে করা যেতে পারে।

গরমে অসুস্থতা থেকে রক্ষায় যা করা যেতে পারে

এসব রোগের বাইরেও গরমে অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

রোদে বের হলে সবসময় ছাতা ও সানগ্লাস ব্যবহার

প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। প্রেশার বা ডায়াবেটিস না থাকলে স্যালাইন পান করা যেতে পারে।

সুতির কাপড়চোপড় ও নরম জুতা পরা

ভারী ও ফাস্টফুড না খাওয়া

পুরনো ও বাসী খাবার না খাওয়া

ঘরে পানি ভর্তি বালতি রাখা, যা ঘর ঠাণ্ডা রাখবে

প্রতিদিন গোসল করা এবং কয়েকবার করে হাত,মুখ, পা ধোয়া

সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, যা ত্বক ভালো রাখবে

তাপদাহের সময় কী করা উচিত?

করণীয় একেবারে সাদামাটা—ঠাণ্ডা থাকুন আর শরীরকে পানিশূন্য হতে দেবেন না।

গরমে রোদের মধ্যে কাজ না করা এবং বেশি পরিশ্রমের কাজ করা থেকে বিরত থাকা ভালো।

ঘরে দিনের বেলাতে পর্দা টেনে দিন। প্রচুর পানি এবং দুধ পান করুন।

সাধারণত দিনের বেলাতেই গরমে বেশি হয়। কিন্তু রাতের অতি গরমও শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

কাউকে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখলে কী করা উচিত?

অতিরিক্ত গরমে কাউকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখলে শুরুতেই তাকে আধা ঘণ্টা ঠাণ্ডায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

যদি তাতে তিনি সুস্থ হয়ে যান, তাহলে বুঝতে হবে, অসুস্থতা গুরুতর নয়।

তীব্র গরমে কাউকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখলে কী করা উচিত, সে বিষয়ে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কিছু পরামর্শ দিয়েছে।

প্রচুর পানি বা পানীয় খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে, পানিশূন্যতা দূর করার পানীয় দেয়া যেতে পারে
আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক ঠাণ্ডা করার ব্যবস্থা করতে হবে, ভেজা কাপড় বা স্পঞ্জ দিয়ে মুছে দেয়া যেতে পারে শরীর। বগলের নিচে এবং ঘাড়ে গলায় ঠাণ্ডা পানি দেবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে

 

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..